North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

অবশেষে ধরা পড়ল ঢাকার ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড কিং’! কুষ্টিয়ায় সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার সুব্রত বাইন

সুব্রত বাইন, ছবি: সংগৃহিত

নিউজ ডেস্ক,নর্থ নিউজ ডট লাইভ।

ঢাকার অপরাধজগতের আতঙ্ক, ভয়ঙ্কর ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের প্রধান সুব্রত বাইন—এবার আর পালাতে পারেনি। কুষ্টিয়ায় রুদ্ধশ্বাস সেনা অভিযানে অবশেষে ধরা পড়েছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।

আজ মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এক চাঞ্চল্যকর অভিযানে সেনাবাহিনী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় ২টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগাজিন ও ১০ রাউন্ড গুলি।

সেনাবাহিনীর চৌকস সদস্যদের একটি বিশেষ দল আগে থেকেই বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল। এরপর পরিকল্পিতভাবে অভিযান চালিয়ে সুব্রত ও মাসুদকে আটক করা হয়। বর্তমানে তাদের ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে, এবং যে কোনও সময় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

কে এই সুব্রত বাইন?

১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসী জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে সুব্রতের। এরপর একে একে গড়ে তোলেন ঢাকার সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধ সংগঠন ‘সেভেন স্টার’।

২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে, তাতে অন্যতম নাম ছিল সুব্রতের। এরপর ২০০৩ সালে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।

নাটকীয় পালিয়ে বেড়ানো

২০০৮ সালে কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে ধরা পড়েন সুব্রত। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার আত্মগোপনে চলে যান। ২০০৯ সালে নেপাল সীমান্তে ধরা পড়েন এবং সেখানকার কারাগারে বন্দি থাকাকালীন ২০১২ সালে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালিয়ে যান!

পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজার থেকে ছদ্মবেশে ‘ফতেহ আলী’ নামে অবস্থানরত সুব্রতকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়।

বছরের পর বছর আত্মগোপনে থাকা সুব্রত বাইন আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসেন, কিন্তু এবার সেনা গোয়েন্দা নজরদারির ফাঁদ থেকে আর রক্ষা পাননি।

গ্রেপ্তারের আগে যা ঘটেছিল: কালীশংকরপুরে সেনা অভিযানের ভিতরের গল্প

জাতীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় আজ সকাল নয়টার দিকে গেলে জানা যায়, ওই বাড়িতে সকাল থেকেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এক নাটকীয় ঘটনার খুঁটিনাটি।

অভিযান চালানো তিনতলা বাড়িটির মালিক মীর মহিউদ্দিন, যা পৌরসভার সাইনবোর্ডে উল্লেখ রয়েছে। এই বাড়িতে বেশিরভাগ তলায় মেস হিসেবে ছাত্ররা ভাড়া থাকেন। দোতলা ও তৃতীয় তলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১৮ জন ছাত্র থাকেন বলে জানা গেছে।

মেসে থাকা ছাত্ররা জানান, দুই মাস আগে বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়েছিলেন পাশের বাড়ির এক স্থানীয় ব্যক্তি। প্রায় ১২–১৫ দিন আগে তিনি একজন ‘অতিথিকে’ এনে সেখানে রেখে যান। কেউ ঠিকমতো নিচতলায় কারা থাকেন, তা জানতেন না। কেবল একজন দাড়িওয়ালা লোককে দিনে এক-দুবার খাবারের সময় বাইরে বের হতে দেখা যেত।

ভোরে শুরু হয় অভিযান

আজ ভোর পাঁচটার কিছু পর হঠাৎ করেই ৫-৬টি সেনাবাহিনীর গাড়ি—including একটি কালো মাইক্রোবাস—বাড়ির সামনে এসে থামে। সেনা সদস্যরা এসে বাড়ির গেট খুলতে বলেন এবং তারপরই উপরের তলায় ওঠেন। মেসের বাসিন্দাদের দোতলা ও তিনতলার নির্দিষ্ট দুটি কক্ষে রাখা হয়।

এক সেনা কর্মকর্তা ছাত্রদের আশ্বস্ত করে বলেন,

“তোমাদের কোনো ভয় বা সমস্যা নেই। আমরা অভিযান চালাচ্ছি। শুধু বসে থাকো।”

তার ভাষায়, অভিযান চলাকালীন দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছিল।

শেষপর্যন্ত কী দেখা গেল?

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে নিচতলার তল্লাশি। সকাল আটটার পর, কালো মাইক্রোবাসটি সরাসরি বাড়ির গেটের সামনে চলে আসে। এরপর দেখা যায়, একজন দাড়িওয়ালা পুরুষকে মাথায় গামছা বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। আরেক যুবককেও দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়।

একজন কৌতূহলী ছাত্র জিজ্ঞেস করেন, “এঁরা কারা?”
একজন সেনা কর্মকর্তা উত্তর দেন:

“এখন বিস্তারিত বললে ভয় পাবে। পরে মিডিয়ায় সব জানতে পারবা।”

এইভাবেই শেষ হয় কুষ্টিয়ার কালীশংকরপুরের সেই ভোরবেলার উত্তেজনা—যেখানে ধরা পড়ে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী।

Scroll to Top