ছবি: সংগৃহীত
নিউজ ডেস্ক,নর্থ নিউজ ডট লাইভ। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ইবাদতের মাধ্যমে পশু উৎসর্গ করা হয়, তাকেই বলা হয় কোরবানি। সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর এটি ওয়াজিব, এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কোরবানির গুরুত্ব অত্যন্ত জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন। এমনকি সামর্থ্য থাকার পরও কেউ কোরবানি না করলে তাঁর ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণীও দিয়েছেন।
তবে কোরবানির এই পবিত্র আমল কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই তা যথাযথ নিয়মে ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
⏳ কোরবানির সময়সীমা:
কোরবানি দেওয়া যায় জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ, তবে প্রথম দিনে কোরবানি করাই সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ। এরপর দ্বিতীয় দিন, তারপর তৃতীয় দিন। ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ঈদের নামাজের আগেই কোরবানি করা নিষিদ্ধ। তবে যেসব এলাকায় ঈদের নামাজ হয় না, সেখানে ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর কোরবানি দেওয়া যেতে পারে।
🧕 কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব?
-
যদি কোনো ব্যক্তি ১০ বা ১১ জিলহজ সফরে থাকেন এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে বাড়ি ফেরেন, তাহলে তাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
-
কোনো স্থায়ী (মুকিম) ব্যক্তি যদি গরিব থাকেন, কিন্তু ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে সম্পদশালী হয়ে ওঠেন, তাঁর ওপরও কোরবানি ফরজ হয়ে যায়।
🔪 কোরবানির সঠিক নিয়ম:
-
নিজের পশু নিজ হাতে জবাই করা সুন্নত ও মুস্তাহাব। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্যকে দিয়ে করানো যাবে। তবে জবাইয়ের সময় পাশে থাকা উত্তম।
-
পশুকে কিবলামুখী করে শুইয়ে দিতে হবে এবং “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে জবাই করতে হবে।
-
ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না বললে জবাই বাতিল হয়ে যাবে। তবে ভুলক্রমে বিস্মৃত হলে তা বৈধ।
💉 কোন রগগুলো কাটতে হবে?
জবাই করার সময় পশুর চারটি রগ কাটতে হয়:
১. গলার স্বরনালি,
২. খাদ্যনালি,
৩. ডান পাশের মোটা রগ (ওয়াজদান),
৪. বাঁ পাশের মোটা রগ।
এই চারটির মধ্যে অন্তত তিনটি কাটা হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। দুইটি কাটলে গ্রহণযোগ্য হবে না।
🧼 কোরবানির আগে করণীয়:
-
ছুরি ভালোভাবে ধার করা জরুরি, যেন পশুকে কষ্ট না হয়।
-
পরিচ্ছন্ন জায়গায় জবাই করতে হবে।
-
জবাইকারীর সহকারী থাকলে তাকেও “বিসমিল্লাহ” বলতে হবে।
🕋 জবাইয়ের আগের দোয়া:
“ইন্নি ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু, ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।”
এরপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হবে।
🕊 জবাইয়ের পরের দোয়া:
“আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদ ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম আলাইহিমাস সালাম।”
যদি একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করেন, তাহলে “মিন্নি”-র বদলে “মিন্না” বলা হবে এবং শরিকদের নাম মনে মনে নিয়ত করলেই হবে।