কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তবে, বর্তমানে দেশের কৃষিজমি ব্যাপক হারে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ৬০-৭০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি তৈরি করছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে কৃষি উৎপাদন কমে যাবে, ফলস্বরূপ খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে হবে আমাদের। ফলে, কৃষিজমি রক্ষা করতে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং ব্যাপক সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানুষের উদাসীনতা ও অসচেতনতাও কৃষিজমির ক্ষতির জন্য দায়ী। একদিকে বাড়ছে নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণ, অন্যদিকে চাষাবাদের জন্য জমির সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিজমির অবৈধ দখল, জলাভূমি ও বনভূমির বিপর্যয় কৃষির জন্য বিপদজনক হতে পারে।
বাংলাদেশের জাতীয় কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (NARC) এর তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০-৭০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি শুধু কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের জন্যও মারাত্মক বিপদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই হার অব্যাহত থাকে, তবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেন, “আমরা যদি কৃষিজমি রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নিই, তাহলে একসময় দেশের খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। জমি কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে এবং কৃষকরা সঠিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারবেন না।”
এছাড়া, বাংলাদেশের কৃষকরা অনেকেই এখনো আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করেননি। উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক কৃষি সরঞ্জামের অভাবে উৎপাদনও কমছে। এই প্রেক্ষিতে কৃষিজমি রক্ষা এবং কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের জন্য সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি এবং কৃষিজমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আধুনিকীকরণ জরুরি।
দেশের কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর বাস্তবায়ন কার্যকরী হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে আরও কার্যকরী উদ্যোগ নিলে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোকেও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আরো বেশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এছাড়া, সরকার যদি কৃষিজমির উপর আরও বেশি নজর দেয়, এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়, তবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষিজমি রক্ষা করতে হলে শুধু কঠোর আইনই নয়, কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতির জন্য উৎসাহিত করা দরকার।
কৃষিজমি রক্ষা করা শুধু কৃষকদের জন্য নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদক্ষেপ নিলে, বাংলাদেশের কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কৃষিজমির সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব।
এখন সময় এসেছে, আমরা যদি আজকে পদক্ষেপ না নিই, তবে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে। কৃষিজমি রক্ষা করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।