তিস্তা যেন নদী নয়, এখন শুধুই স্মৃতি! পানি নেই, নেই স্রোত—চারদিকে শুধু বালু আর চর। নাব্যতা সংকটে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদী এখন একরকম মরা খালের রূপ নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর পলির স্তূপে নদীর বুক ভরে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ একেবারে বন্ধের পথে।
এই পরিস্থিতিতে জেলার সাতটি গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিস্তার বুক চিরে চলে যাওয়া সেই রুটগুলো হলো—ঠুটাপাইকর থেকে তিস্তাঘাট, কালির মেলা থেকে পাড়ামৌলা ঘাট, বুড়িরহাট থেকে ঢুঁষমারার চর, ডাংরারহাট ঘাট থেকে চরবিদ্যানন্দ, তৈয়বখাঁ ঘাট থেকে চর বিদ্যানন্দ, সরিষাবাড়ী থেকে মাঝেরচর ঘাট এবং তিস্তা থেকে থেতরাই ঘাট।
নৌচলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী—সবাইকে ঘুরপথে অতিরিক্ত সময় ও খরচে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
কালিরহাট গ্রামের মিলন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, “নদীজুড়ে এখন চর আর চর। নৌকা চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুরে যানবাহনে চলাচল এখন বড় কষ্ট।”
চরবিদ্যানন্দ গ্রামের সরকারি চাকরিজীবী মাসুদ রানা বলেন, “নৌপথ বন্ধ থাকায় কাউনিয়া হয়ে ২৫ কিলোমিটার ঘুরে অফিসে যেতে হয়। প্রায়ই দেরি হয়। দ্রুত নদী খননের দাবি জানাই।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তায় এখন চরই চর। কেউ কেউ নদীর মাঝ দিয়েই হেঁটে পার হচ্ছেন। বর্ষায় উজান থেকে আসা ঢলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। নুড়ি, কাঁকর আর বালির স্তূপ জমে অনেক জায়গায় আবাদি জমিও নষ্ট হচ্ছে।
তবে নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা চরেও বসতি ও চাষাবাদ গড়ে উঠেছে। ফসল হচ্ছে আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, গম, বাদাম, ভুট্টা, তিলসহ নানা ধরণের। কোথাও কোথাও বসেছে দোকানপাট, গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি।
এই পরিস্থিতির জন্য অনেকেই ভারতীয় পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ার বিষয়টিকে দায়ী করছেন। দীর্ঘ তিন দশক ধরে চলা এই কর্মকাণ্ড তিস্তার গতিপথ বদলে দিয়েছে। অথচ এখনও পর্যন্ত নদী খননে নেই কোনো প্রকল্প।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন, “বর্তমানে তিস্তা খননের জন্য কোনো প্রকল্প হাতে নেই। তবে মহাপরিকল্পনায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।”