North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

জলবায়ু সহনশীল কৃষির পথে বাংলাদেশ: কৃষক এখন পরিবর্তনের নায়ক

বাংলাদেশের কৃষি খাত শুধু খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি নয়—এটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জমির ক্রমহ্রাস এই খাতকে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষক ও গবেষকরা এখন নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সচেতনতার মাধ্যমে গড়ে তুলছেন জলবায়ু সহনশীল কৃষির নতুন ধারা।

উচ্চ ফলনশীল এবং পরিবেশ সহনশীল বীজ
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) জলবায়ু সহনশীল উচ্চ ফলনশীল বীজ উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, বারি গম-৩৩-এর মতো জাতগুলো খরা, লবণাক্ততা, বন্যা—এসব প্রাকৃতিক ঝুঁকি সহ্য করতে সক্ষম।

প্রযুক্তির ব্যবহার: কৃষকের হাতে মোবাইলেই সমাধান
কৃষকরা এখন মোবাইল অ্যাপ ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্য, জমির উপযোগিতা, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা এবং বাজারদর জানতে পারছেন। “কৃষি বাতায়ন”, “ফসল বন্ধু”, “Krishi Call Center” – এসব উদ্যোগ গ্রামের কৃষকদের কাছে প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করে তুলেছে।

কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নতুন উদ্যোগ
বর্তমানে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাঁরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, ডেইরি, হাঁস-মুরগি ও হর্টিকালচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একদিকে তাঁরা বাড়তি আয় করছেন, অন্যদিকে খাদ্য শিল্পেও অবদান রাখছেন।

কৃষি শুধু উৎপাদন নয়, পরিবেশও
জৈব সার ব্যবহার, ভার্মি কম্পোস্ট, মালচিং এবং জল সংরক্ষণ—এই সব পদ্ধতিগুলো পরিবেশবান্ধব কৃষিকে জনপ্রিয় করছে। কৃষকরা এখন শুধু উৎপাদনে নয়, টেকসই কৃষিপদ্ধতির দিকেও নজর দিচ্ছেন।

কৃষকের কণ্ঠে পরিবর্তনের গল্প
রাজশাহীর বাগমারার কৃষক লুৎফর রহমান বলেন,
“আগে শুধু ধান চাষ করতাম, এখন একই জমিতে মৌসুমি সবজি করি। সোলার পাম্পে পানি দিই, আর ইউটিউব দেখে শিখি কীভাবে কম খরচে বেশি ফলন নেওয়া যায়।”


বাংলাদেশের কৃষক এখন আর শুধু উৎপাদকের ভূমিকায় নেই। তিনি জলবায়ুর অভিঘাত বুঝে, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পরিবর্তনের সৈনিক। তাই সরকার, বেসরকারি খাত ও সমাজকে একসাথে কাজ করতে হবে—একটি জলবায়ু সহনশীল, টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য।

Scroll to Top