এস আর সাকিল-নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর নিয়ামতপুরে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ নেতা, বিএনপি কর্মী,ছাত্রদলনেতা,ও ইউপি সদস্য এর বিরুদ্ধে।
ইউপি সদস্য
নওগাঁর নিয়ামতপুরে ৬নং পাঁড়ইল ইউনিয়ন সদস্য সাইদুর রহমান এর বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তার গাছ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান,বিএনপি কর্মী কামাল,ছাত্রদল নেতা মিঠুন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ১০ থেকে ১২টি গাছ চার্জার ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামীলীগ নেতা
মঙ্গবার (২০মে) উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নে বিদিরপুর এলাকায় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ১০ টি আকাশমণি গাছ কেটে নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা মতিউর শাহ্। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের রাজবাড়ি(টুকিয়াপাড়া)-মির্জাপুর সড়কের ২পাশে বন বিভাগের গাছ লাগানো ছিল। মঙ্গলবার সকালে ওই সড়কে বন বিভাগের লাগানো গাছগুলো আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর শাহ্ রাজবাড়ি বাজারের গাছ ব্যবসায়ী ইমান আলীর কাছে ১০ টি আকাশমণির গাছ বিক্রি করেন । এই বিষয়ে গাছ ব্যবসায়ী ইমান আলী বলেন,বন বিভাগের থেকে অনুমিত নিয়ে গাছ বিক্রি করেছেন তার কাছে। সেই ১০ টি গাছ ২৫ হাজার ধরে ক্রয় করেছেন।
ছাত্রদল নেতা :
নিয়ামতপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুন্ম আহবায়ক আরিফুজ্জামান আরিফ ও ছাত্রদল নেতা মিঠুন উভয়ে ঝড়ে পড়ে যাওয়া দাদরইল-খড়িকাডাঙ্গা পাশ দিয়ে খাড়ির দুই পাশে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ লাগানো আকাশমণি কয়েকটি গাছ কেটে বিক্রি করেছেন রাজবাড়ি বাজারের গাছ ব্যবসায়ী মতিউর এর কাছে। ঝড়ে পড়ে থাকা গাছ বরেন্দ্র অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে কাটার কথা থাকলেও ছাত্রদল নেতা মিঠনকে আস্ত গোটা গাছ কাটতে দেখা যায়।
বিএনপি কর্মী
বুধবার (১৪ মে ২০২৫) পাঁড়ইল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড দাদরইল-তুলারবাঐল সড়কে ঝড়ে পড়ে যাওয়া রাস্তার ধারের একটি আকাশমনি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে হিন্দুরবাঐল গ্রামের বিএনপি কর্মী কামাল হোসেন এর বিরুদ্ধে ।
অভিযুক্ত মতিউর শাহ্’র বক্তব্য
গাছ কাটার কথা স্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর শাহ্ বলেন বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ না করতে পেরে গাছগুলো বিক্রি করেছি।
অভিযুক্ত কামাল এর বক্তব্য
অপরদিকে বিএনপি নেতা কামাল বলেন,গাছ আমরা লাগাইছি এগুলা কাটার অধিকার আমাদের আছে। বন বিভাগ আমাদের কাটার অনুমতি দিয়েছে।
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার বক্তব্য
নিয়ামতপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুন্ম আহবায়ক আরিফুজ্জামান আরিফ ও ছাত্রদল নেতা মিঠুন উভয়ে বলেন,বরেন্দ্র অফিসের অনুমতি নিয়ে ২ টি গাছ বিক্রি করেছি।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বক্তব্য
পাঁড়ইল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য সাইদুর রহমান বলেন ঝড়ে বাড়ি ঘর উড়ে গেছে তাই কয়েকটি গাছ নিয়ে যাচ্ছি বাড়ি-ঘর মেরামত করার জন্য।
জনসাধারণের অভিযোগ ও ক্ষোভ
নাম প্রকাশ্যে অনচ্ছিক কয়েকজন বলেন, মতিউর শাহ্ নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের একজন দোসর। বিগতদিনে পাঁড়ইল ইউনিয়নের গ্রেফতারকৃত ও নানা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দার সহযোগীতায় একাধিক বন বিভাগের গাছ রাতের আধারে বিক্রি করেছেন। তার ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খোলার সাহস পেতনা। কিন্ত বর্তমানেও একই কাজ করছেন। এছাড়াও বন বিভাগের কর্মকতারা সরাসরি এসে হাতে নাতে ধরার পরও কোন রকম পদক্ষেপ নেয়নি।
অপর দিকে কামালকে নিয়ে স্থানীয়রা বলেন,এটা নতুন কিছু না বিগতদিনেও রাস্তার গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর দাবি এদের সুষ্ট তদন্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান ঝড়ের পরের দিনে দাঁড়িয়ে থেকে কয়েক জনের সহযোগিতায় বন বিভাগের গাছ কেটে বিক্রি করেছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশ করা নিয়ে হুমকি
প্রতিবেদন এর তথ্য সংগ্র করতে গেলে সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত করেন বিএনপি কর্মী কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আপনাদের প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য না। পারলে কিছু করার থাকলে করিয়েন। সেইসঙ্গে নিউজ প্রকাশ হলে প্রাণ নাশের হুমকি ধামকি দিয়েছে অভিযুক্তরা।
প্রশাসনের মতামত
উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মুর্শেদা খাতুন ও উপজেলা সহকারি ভুমি কর্মকতা রেজাউল করিম বলেন গাছ গুলোর দায়িত্ব আমাদের না। আপনারা বন বিভাগ ও বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।
নিয়ামতপুর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা জানান, আমাদের থেকে কেউ কোন অনুমতি নেই নি। কামাল এর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এবং মতিউর শাহ্কে হাতে নাতে গাছ ব্যবসায়ীসহ ঘটনা স্থলে পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেন।
তবে এতদিন পর পার হয়ে গেলও বনবিভাগ কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি। তাহলে কি বন বিভাগের কর্মকতাও এই গাছ সিন্ডিকেট এর সাথে জড়িত আছে কিনা সে প্রশ্ন সাধারণ জনগণের।