North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

প্রযুক্তিই এখন কৃষকের সবচেয়ে বড় বন্ধু

কৃষক মানেই আগে ভাবা হতো—গরুর গাড়ি, লাঙল, ঘামে ভেজা শরীর আর চরম কষ্টে ফসল ফলানো মানুষ। কিন্তু সেই চিত্র এখন বদলে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের অনেক কৃষকই হাতে ধরে ট্যাবলেট কিংবা মোবাইল, কানে ব্লুটুথ ইয়ারফোন, আর মাঠের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন যান্ত্রিকভাবে। গরু নয়, প্রযুক্তিই এখন হয়ে উঠেছে কৃষকের সবচেয়ে বড় সহচর।

আমাদের দেশের কৃষি খাতে ‘স্মার্ট কৃষি’ ধারণা গত কয়েক বছরে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় ড্রোন ব্যবহার করে কীটনাশক ছিটানো, মাটির স্বাস্থ্য যাচাইয়ের জন্য ডিজিটাল কিট, সেচ ব্যবস্থায় অটোমেশন, এমনকি AI-ভিত্তিক অ্যাপ দিয়ে ফসলের রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে।

এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি—সরকারি উদ্যোগ, স্থানীয় উদ্যোগী কৃষক, এবং বেসরকারি অ্যাগ্রিটেক স্টার্টআপগুলো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘ডিজিটাল কৃষি সেবা’ চালু করেছে, যেখানে এসএমএস বা অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকেরা আবহাওয়ার আপডেট, সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাইয়ের পরামর্শ পেয়ে যাচ্ছেন।

অনেক এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই আধুনিক কৃষিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু উৎপাদন বাড়াচ্ছে না, কৃষিকে বানাচ্ছে আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক পেশা। এখন আর মাঠে কাজ মানেই পশ্চাৎপদতা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে ‘টেক-ড্রিভেন’ একটা সেক্টর।

তবে প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধাও রয়েছে। যেমন—বিদ্যুৎঘাটতি, ইন্টারনেটের ধীরগতি বা কৃষকের প্রশিক্ষণের অভাব। কিন্তু সময়ের সাথে এসব সমস্যা দ্রুত কমে আসছে।

স্মার্ট কৃষির হাত ধরেই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। কল্পনা করা যায়? একসময় যে কৃষক ট্রাক্টরের নাম জানত না, সে এখন QR কোড স্ক্যান করে সার অর্ডার করছে।

যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিতে এশিয়ার নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত। ভবিষ্যতের কৃষক হবেন—মাটি ছোঁয়া মানুষ, যিনি প্রযুক্তি জানেন, বাজার বোঝেন এবং বিশ্বমানের ফসল ফলাতে পারেন।

Scroll to Top