বাংলাদেশের কৃষি খাতে বরো ধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ভালো ফলন পেতে কৃষকদের কিছু বিশেষ দিক মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
উন্নত জাতের ধান নির্বাচন
বরো মৌসুমে ভালো ফলন পেতে উন্নত জাতের ধান চাষ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিএআরআই ধান-২৮, বিএআরআই ধান-২৯, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-৮১ ও ব্রি ধান-৮৯ সহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের ধান বেছে নেওয়া যেতে পারে।
সঠিক সময় বীজতলা তৈরি ও রোপণ
উন্নত চারা উৎপাদনের জন্য নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে বীজতলা তৈরি করতে হবে। রোগবালাই মুক্ত ও ভালো মানের বীজ ব্যবহার করা উচিত। ২৫-৩০ দিনের চারা জমিতে রোপণ করা উত্তম।
জমি প্রস্তুতি ও রোপণ পদ্ধতি
বরো ধান চাষের জন্য গভীর লাঙ্গল দিয়ে মাটির নিচের শক্ত স্তর ভেঙে দিতে হবে। তিনবার চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করতে হবে।
সঠিকভাবে সার প্রয়োগ
উচ্চ ফলন পেতে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
ইউরিয়া – ২০০-২৫০ কেজি/হেক্টর
টিএসপি – ১২০-১৩০ কেজি/হেক্টর
এমওপি – ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর
জিপসাম – ৬০ কেজি/হেক্টরসার প্রয়োগ পর্যায়ক্রমে করতে হবে, বিশেষ করে ইউরিয়া সার তিন দফায় প্রয়োগ করা উত্তম।
সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
বরো ধান চাষে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমিতে পর্যাপ্ত জল থাকলেও অতিরিক্ত পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ধানের কাইচ থোড় আসার সময় ও ধান গঠনের সময় পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করতে হবে।
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন
বরো ধানে ব্লাস্ট, পাতার পোড়া রোগ, বাদামি দাগ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া মাজরা পোকা, বাদামি ফড়িং, গন্ধি পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ হয়ে থাকে।
নিয়মিত নজরদারি করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ করা উচিত।
প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
ফসল কাটার সময় নির্ধারণের জন্য ধানের দানা শক্ত ও সোনালি রঙ ধারণ করলে তা কাটা উচিত। সাধারণত ধান কাটার সময় আর্দ্রতা ২০-২২% থাকলে সেটি সঠিক সময় ধরা হয়। এরপর রোদে শুকিয়ে ১২-১৪% আর্দ্রতায় নামিয়ে গুদামজাত করা ভালো।
বরো ধান চাষে সঠিক জাত নির্বাচন, পর্যাপ্ত পরিচর্যা ও সঠিক সময়ে সার, পানি ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। কৃষকদের উচিত আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা।