ছবি: সংগৃহিত
নিউজ ডেস্ক:নর্থ নিউজ ডট লাইভ।বর্ষাকাল, বৃষ্টির জল আর সজীব মাটির স্পর্শে প্রাণ ফিরে পায় বাংলাদেশের কৃষিভূমি। এই ঋতুকে ঘিরে বেশ কিছু সবজি চাষে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো কুমড়া চাষ। অনেকেই একে স্থানীয়ভাবে বলে “মিষ্টি কুমড়া” বা “মিষ্টি লাউ”। কুমড়া এমন একটি সবজি যা রান্নায়, মিষ্টি তৈরিতে এমনকি ওষুধি ব্যবহারেও বহুল প্রচলিত।
কেন বর্ষাকালে কুমড়া চাষ করবেন?
-
মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ফলন ভালো হয়
-
বৃষ্টির পানি ব্যবহারে সেচ খরচ কমে
-
বর্ষার পর কুমড়ার বাজারে ভালো চাহিদা থাকে
-
সংরক্ষণের সুবিধা থাকায় দীর্ঘ সময় বাজারজাত করা যায়
উপযুক্ত জমি ও আবহাওয়া
কুমড়ার জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি উপযোগী। পানি জমে না এমন জায়গা বেছে নিতে হবে। মাটি হতে হবে দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ জাতীয়। pH মাত্রা ৫.৫ থেকে ৭ এর মধ্যে হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বর্ষার মাঝামাঝি সময় (জুন-জুলাই) বীজ বপনের আদর্শ সময়।
বীজ বপন ও চারা তৈরি
১. গর্ত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি গর্তে ২–৩টি বীজ বপন করুন।
২. চারা ১৫–২০ দিন বয়স হলে মূল জমিতে রোপণ করুন।
৩. গাছের মাঝে অন্তত ১.৫ মিটার দূরত্ব রাখুন যেন শাখা-প্রশাখা ভালোভাবে বিস্তৃত হতে পারে।
সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি গর্তে:
-
গোবর: ৪–৫ কেজি
-
ইউরিয়া: ৩০ গ্রাম
-
টিএসপি: ২৫ গ্রাম
-
এমওপি: ২০ গ্রাম
চাষের ২৫-৩০ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া ও এমওপি উপরি প্রয়োগ করতে হয়। পরে ১৫ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে।
লতা ওঠানোর পদ্ধতি
কুমড়া গাছকে মাচা বা বাঁশের কাঠামোর সাহায্যে ওপরে ওঠানো উচিত। এতে বাতাস চলাচল সহজ হয় এবং রোগবালাই কম হয়। সেইসঙ্গে ফলও মাটিতে ঘষা না খেয়ে সুন্দরভাবে বাড়ে।
রোগবালাই ও প্রতিকার
-
পাউডারি মিলডিউ বা সাদা ছত্রাক দেখা দিলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
-
লিফ স্পট বা পাতায় দাগ হলে ডাইথেন এম-৪৫ বা রিডোমিল স্প্রে করুন।
-
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে অর্গানিক বা জীবানাশক ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
ফুল ফোটার ৮০–৯০ দিনের মধ্যে কুমড়া সংগ্রহ উপযুক্ত হয়। কুমড়া কাটার পর শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করলে প্রায় ৩–৪ মাস ভালো থাকে।
বাজার ও লাভ
বর্ষার পরে হেমন্তকাল পর্যন্ত কুমড়ার বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। একটি গাছে ১০–১৫টি কুমড়া পাওয়া যায়। প্রতিটি কুমড়ার ওজন হয় ৩–৭ কেজি। বাজার দর অনুযায়ী প্রতিগাছের আয় হয় ৩০০–৬০০ টাকা পর্যন্ত, যদি পরিচর্যা ভালো হয়।
উপসংহার
সঠিক পরিকল্পনা, নিয়মিত পরিচর্যা আর রোগমুক্ত পরিবেশে চাষ করলে বর্ষাকালে কুমড়া হতে পারে এক লাভজনক সবজি। বর্ষায় যারা বাণিজ্যিক চাষে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার সুযোগ।