ঈদুল আজহার আগেই বাজারে আসতে চলেছে নতুন চেহারার নোট—যা নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। দুই টাকা থেকে এক হাজার টাকার নতুন নোটে থাকছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ গ্রাফিতি, তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকছে না—এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করেছে, নতুন নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং ছাপার কাজ পুরোদমে চলছে। ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, “নতুন নোটে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে, সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের কিছু প্রতীকী চিত্রও থাকতে পারে।”
মে মাসের শেষ দিকে এই নতুন নোট বাজারে আসবে বলে জানানো হয়েছে। তবে একসঙ্গে সব ধরনের নোট পাওয়া যাবে না—প্রাথমিকভাবে ৪ ধরনের নতুন নোটই প্রথমে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে পুরনো নোটের ঘাটতির কারণে ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভোগান্তি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে বঙ্গবন্ধুর ছবি-যুক্ত বিপুলসংখ্যক নোট থাকলেও সেগুলো ছাড়ার অনুমতি নেই। এই কারণে ব্যাংক ও এটিএম বুথে টাকার সংকট বেড়েছে, এবং অনেক জায়গায় ছেঁড়া নোট ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন কিন্তু বিতরণ না হওয়া নোট ব্যাংকের ভল্টে পড়ে রয়েছে। অথচ খোলাবাজারে ছেঁড়াফাটা নোটে লেনদেন করতে গিয়ে জনসাধারণ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে টাকার সংকট চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। তাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকে মজুত থাকা নোটগুলো ছাড়া হোক।
বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপার কারখানা বা টাকশাল বছরে সর্বোচ্চ ১২০ কোটি পিস নতুন নোট ছাপাতে সক্ষম হলেও চাহিদা ১৫০ কোটি পিসের বেশি। এ কারণে ধাপে ধাপে সব নোটেই পরিবর্তন আনা হবে।
গত ৮ ডিসেম্বর নতুন সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় নতুন নোটের সিদ্ধান্ত অনুমোদন পায়। এরপর সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও খ্যাতিমান শিল্পীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি নতুন নোটের নকশা চূড়ান্ত করে।
এই নতুন নোটে দেশীয় ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালির সংস্কৃতি ও জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস স্থান পেলেও, বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ পড়ে গেছে—যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
সবকিছু ঠিক থাকলে মে মাসের শেষ দিকেই সীমিত আকারে বাজারে দেখা মিলবে নতুন রূপের টাকা।