North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

বিচারের অপেক্ষায় থাকা লামিয়ার আত্মহত্যা: ধর্ষণের শিকার শহিদকন্যার করুণ পরিণতি”

ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ হওয়া পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া আক্তার (১৭) আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের বি/৭০ নম্বর বাড়িতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, রবিববার বিকেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল লামিয়ার। শনিবার বিকেলে তারা একসঙ্গে মার্কেটে গিয়ে নতুন জামাকাপড় কিনেন। সন্ধ্যায় ছোট মেয়েকে মাদরাসায় দিয়ে আসতে যান মা। এ সময় সুযোগ পেয়ে রাত ৯টার দিকে নিজ রুমে গলায় ফাঁস দেন লামিয়া। পরে স্থানীয়রা মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান।

নিহতের মামা জানান, “আমি দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন আসে—ভাগ্নি মারা গেছে। দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি, লামিয়া নিথর হয়ে পড়ে আছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমার বোন স্বামী হারিয়েছিল, এখন মেয়ে হারাল। ধর্ষণ মামলার আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। বিচার চাইবো কার কাছে?”

প্রতিবেশীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মা-মেয়ে একসঙ্গে কাপড় কিনে ফিরেছিলেন। রাতে ছোট মেয়েকে মাদরাসায় নিয়ে যাওয়ার ফাঁকে বড় মেয়ে আত্মহত্যা করেন। তারা ধারণা করছেন, কেউ হয়তো তাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে, যার চাপে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।

এ বিষয়ে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাকারিয়া জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নে রাস্তা থেকে অপহরণের পর লামিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরদিন পুলিশ অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে পরে গ্রেপ্তারকৃতরা জামিনে মুক্তি পায় এবং অন্য অভিযুক্তরাও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, ধর্ষণ মামলার আসামিরা মুক্তি পাওয়ার খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন লামিয়া। বিচার না পাওয়ার হতাশা থেকেই তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি ফেরার পথে নলদোয়ানী এলাকায় লামিয়াকে অনুসরণ করেন সাকিব ও সিফাত নামের দুই যুবক। মুখ চেপে ধরে জলিল মুন্সির ভিটায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় এবং সেই দৃশ্যের ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় লামিয়া নিজেই দুমকি থানায় মামলা করেন।

Scroll to Top