
বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৫ সালে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে—এমনই সতর্কতা এসেছে ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে। রয়টার্সের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি করেছে। তার “নতুন বাণিজ্য গঠন” পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমদানির ওপর ব্যাপক হারে শুল্কারোপ বিশ্বজুড়ে ব্যবসার আস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। এর প্রভাবেই ট্রিলিয়ন ডলারের শেয়ারবাজার ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং ডলারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা টালমাটাল হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী ৩০০ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৯২ শতাংশ বলছেন, ট্রাম্পের এই নীতি সরাসরি ব্যবসায়িক আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মাত্র ৮ শতাংশ বিশ্লেষক ছিলেন নিরপেক্ষ, যাদের বেশিরভাগই উদীয়মান অর্থনীতির দেশ থেকে এসেছেন।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জরিপে অংশ নেওয়া ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন জানিয়েছেন, ২০২৫ সালে মন্দার ঝুঁকি ‘উচ্চ’ কিংবা ‘খুব উচ্চ’। মাত্র ৬৬ জন এটিকে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছেন।
বিশ্ব প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও নিচের দিকে। ২০২৫ সালের জন্য গড় প্রবৃদ্ধি হার ৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২.৭ শতাংশ। আইএমএফ সামান্য বেশি, ২.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছে। ৪৮টি প্রধান অর্থনীতির মধ্যে ২৮টির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ধরা হয়েছে।
চীন ও রাশিয়া তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে চীনের প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ এবং রাশিয়ার ১.৭ শতাংশে থাকবে। বিপরীতে মেক্সিকো ও কানাডার অবস্থা শোচনীয়—যথাক্রমে ০.২ ও ১.২ শতাংশে নেমে আসতে পারে তাদের প্রবৃদ্ধি।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে যে সুদের হার বাড়ানো হয়েছিল, তা কার্যকর না-ও হতে পারে এই নতুন শুল্কনীতির কারণে। এতে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ টিমোথি গ্রাফ সতর্ক করে বলেন, “দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তির আস্থা নষ্ট হয়েছে, যা শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।”
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্ট্যাগফ্লেশন-এর দিকে এগোচ্ছে—যেখানে মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব একসঙ্গে দেখা দেয়।
রয়টার্সের জরিপ বলছে, ২৯টি বৃহৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি চলতি বছরে তাদের মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। যদিও ২০২৬ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫টিতে নামতে পারে।
বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, বিশ্ব অর্থনীতি সামনে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাবে। এখন প্রশ্ন—বিশ্বনেতারা কি পারবেন সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে?