বৃষ্টির পানিতে চাষ!‘রেইনহারভেস্টিং টেকনোলজি’ বদলে দিচ্ছে খরাপ্রবণ অঞ্চলের কৃষি
শুষ্ক ও অনাবৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় কৃষি যেন অলৌকিক কোনো ঘটনা—এই ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করছে আধুনিক ‘রেইনহারভেস্টিং প্রযুক্তি’। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টির একফোঁটা পানিও অপচয় না করে জমি চাষের কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে।
রেইনহারভেস্টিং প্রযুক্তিতে মূলত বাড়ির ছাদ, উঁচু জমি, বা প্লাস্টিক শিটের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা হয় এবং তা স্টোরেজ ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয়। পরে এই পানি সোলার পাম্প বা স্বাভাবিক গ্র্যাভিটি ফোর্সের মাধ্যমে জমিতে পাঠানো হয়, বিশেষত যেখানে পানির সংকট প্রকট। এতে পানির অপচয় কমে, পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়, এবং সেচের খরচ কমে যায় প্রায় ৪০% পর্যন্ত।
ভারতের মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং কর্ণাটকের মতো খরাপ্রবণ অঞ্চলে ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদ জেলার একটি প্রকল্পে ২০২৩ সালে প্রায় ৩০০ কৃষক তাদের বাড়ির ছাদে রেইনওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম বসিয়ে সারা মৌসুমে সেচ দিতে পেরেছেন, যেখানে আগে তাঁরা জুন-জুলাই পর্যন্তই সীমিত সেচ দিতে পারতেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন কৃষকদের পানির ওপর নির্ভরতা কমায়, অন্যদিকে ফসল উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। ভবিষ্যতে এটি জলবায়ু-সহনশীল কৃষির জন্য একটি টেকসই ও লাভজনক মডেল হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
কৃষি গবেষক ও টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট অরবিন্দ রাও বলেন, “এই প্রযুক্তি শুধু পানি সংরক্ষণই নয়, বরং কৃষকের স্বাধীনতা এনে দিচ্ছে। তাঁরা এখন বর্ষার জন্য অপেক্ষা না করেই পরিকল্পিতভাবে চাষ করতে পারছেন।”
এই ধরনের উদ্যোগ শুধু খরাপ্রবণ নয়, বরং উপকূলীয় অঞ্চলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যেখানে লবণাক্ত পানি ফসলের ক্ষতি করে। রেইনওয়াটার হারভেস্টিংয়ের মাধ্যমে কৃষকরা স্বল্প ব্যয়ে বিশুদ্ধ পানি পেতে পারেন, যা ফসলের গুণগত মানও বাড়ায়।
সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এই প্রযুক্তিকে আরও বেশি কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রশিক্ষণ, ভর্তুকি ও প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে—এটা এখন সময়ের দাবি।