North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

মহানবীর (সা.) যুগে কোরবানির উৎসব: ইতিহাসের আলোয় ঈদুল আযহা

ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আযহা—একটি নাম, যার পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো বছরের আত্মত্যাগের গল্প। কেবল আনন্দ আর ভোজনের উৎসব নয়, ঈদুল আযহা হচ্ছে সেই ধর্মীয় উপলক্ষ, যেখানে ইমানের গভীরতা, আত্মদানের মহত্ত্ব এবং সামাজিক সংহতির বার্তা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এই উৎসবের গোড়াপত্তন ঘটে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে, যা পরবর্তীতে বিস্তৃত হয়েছে গোটা মুসলিম সমাজে।

নবীজি (সা.)-এর হাতে সূচনা

মদিনায় হিজরতের পর মহানবী (সা.) ঈদুল আযহার আনুষ্ঠানিক উদ্‌যাপন শুরু করেন। তিনি প্রতি ঈদুল আযহায় দুটি দুম্বা কোরবানি দিতেন—একটি নিজের জন্য, অন্যটি তাঁর সেই উম্মতের জন্য যারা কোরবানি দিতে অক্ষম। কোরবানির সময় তিনি বলতেন, “বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার… এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে যারা কোরবানি দিতে পারেনি।”

ইমাম তিরমিজির মতে, মহানবী (সা.) কোরবানির মাংস তিনভাগে ভাগ করতেন—এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়দের জন্য, আর এক ভাগ গরিবদের জন্য। এতে বোঝা যায়, কোরবানি শুধুই ইবাদত নয়, এটি একটি সাম্যবাদী প্রথাও বটে।

কোরবানির আধ্যাত্মিক শেকড়

এই উৎসবের মূল গল্প কুরআনের সুরা সাফফাতে বর্ণিত—ইবরাহিম (আ.)-এর সেই ঐতিহাসিক ত্যাগের যেখানে তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হন। ইসমাইলও তাতে সানন্দে রাজি হন। শেষ মুহূর্তে আল্লাহ তাঁদের আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ একটি দুম্বা প্রেরণ করেন।

ইমাম তাবারি বলেন, কোরবানি হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ—নফসের লোভ, অহংকার ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে আত্মিক জিহাদ। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা।

সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বার্তা

ইমাম গাজ্জালি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইহয়াউ উলুমিদ্দিন-এ ব্যাখ্যা করেছেন—কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা আর মানুষের প্রতি সহমর্মিতার সমন্বয়। গরিবদের সঙ্গে কোরবানির মাংস ভাগাভাগি করার মাধ্যমে সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা পায়, ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ কমে, গড়ে ওঠে ভ্রাতৃত্ব।

ঈদুল আযহার নামাজও এই সামাজিক সংহতির একটি প্রতীক। নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে ঈদের মাঠে অংশ নেন। এমনকি হাদিসে রয়েছে, নারীসাহাবিরাও ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতেন—যা ঈদের সার্বজনীনতা প্রমাণ করে।

ঈদ মানেই প্রাণচাঞ্চল্য

ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে, ঈদের দিনে মদিনার যুবকরা ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র নিয়ে খেলাধুলায় মেতে উঠতেন। এমন একটি দৃশ্য উপভোগ করতে স্বয়ং নবীজি (সা.) আয়েশা (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এটা ছিল বিনোদনের সঙ্গে ঐতিহ্যচর্চার এক অনন্য মেলবন্ধন।

Scroll to Top