North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

সালাহ: লিভারপুলের অনন্য মহাতারকা

মিশরের বালুকাময় প্রান্তর থেকে উঠে এসে ইংল্যান্ডের ফুটবল অঙ্গনে নিজের চিহ্ন রেখে গেছেন মুহাম্মদ সালাহ, বা যাকে সবাই জানেন “মোহাম্মদ সালাহ” নামে। তিনি শুধু লিভারপুলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রই নন, বরং আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা উইঙ্গার হিসেবেও পরিচিত। সালাহর আত্মবিশ্বাসী খেলা, অসাধারণ স্কিল, এবং অসীম পরিশ্রম তাকে ক্লাব ও জাতীয় দল উভয় ক্ষেত্রেই একটি কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

🏆 লিভারপুলের জন্য সালাহর অবদান
২০১৭ সালে রোমা থেকে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর সালাহ যা অর্জন করেছেন তা ফুটবল জগতে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। তার আক্রমণাত্মক খেলার স্টাইল এবং গোল করার ক্ষমতা লিভারপুলের আক্রমণকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে তিনি ৩২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন, যা এখনও অনেকের কাছে অপ্রতিরোধ্য মনে হয়।

২০২৪-২৫ মৌসুমে সালাহ আবারও প্রমাণ করেছেন কেন তিনি লিভারপুলের মহাতারকা।
এ মৌসুমে লিভারপুল তাদের ২০তম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে, আর এই ঐতিহাসিক অর্জনে সালাহর অবদান ছিল দুর্দান্ত:

মোট ম্যাচ খেলেছেন: ৩১

গোল করেছেন: ১৬

অ্যাসিস্ট দিয়েছেন: ৯

মোট গোল অবদান (গোল + অ্যাসিস্ট): ২৫

ম্যাচের সেরা (Man of the Match): ৬ বার

বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে সালাহর গোল ও অ্যাসিস্ট লিভারপুলের শিরোপা রেসে বড় ফারাক গড়ে দেয়। চেলসির বিপক্ষে হোম ম্যাচে তার একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট ছিল মৌসুমের টার্নিং পয়েন্ট। এছাড়া শেষ ম্যাচে তার পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে লিভারপুলের চূড়ান্ত বিজয়।

⚽ অসাধারণ খেলার স্টাইল
সালাহর খেলার ধরন একেবারে অনন্য। তার দ্রুতগতি, শূন্য কোণ থেকে গোল করার ক্ষমতা, এবং পাসিং স্নায়ু তাকে বিশ্ব ফুটবলে একটি মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বক্সের বাইরে থেকে ড্রিবলিং করে গোল করার তার বিশেষ দক্ষতা, অথবা একক প্রচেষ্টায় একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেওয়ার ক্ষমতা, তাকে আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।

২০২৪-২৫ মৌসুমে সালাহ শুধু একজন গোল স্কোরার নন, বরং প্লে-মেকার হিসেবেও দুর্দান্ত ভূমিকা রেখেছেন। ক্লপের অধীনে তার খেলার রোল কিছুটা বদলে গিয়ে গোটা দলের আক্রমণের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে।

🌍 জাতীয় দলের জন্য সালাহ
জাতীয় দলের হয়ে সালাহ মিশরকে এক নতুন মর্যাদায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন। তিনি ২০১৭ সালের আফ্রিকান নেশনস কাপের ফাইনালে তার দলকে নেতৃত্ব দেন এবং ২০১৮ বিশ্বকাপে মিশরের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার উপস্থিতি ও খেলার ধারাবাহিকতা মিশরীয় ফুটবলকে বিশ্ব মঞ্চে পরিচিতি দিয়েছে।

💫 মিশরের আইকন এবং মানবিক উদ্যোগ
একজন ফুটবলার হিসেবে সালাহ কেবল তার খেলার জন্যই নয়, তার মানবিক দিক থেকেও প্রশংসিত। তিনি মিশরের গরীব জনগণের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য প্রদান করেন, স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি করেন এবং তার শহর গাজার উন্নয়নে সক্রিয়। এসব উদ্যোগ তাকে শুধুমাত্র ফুটবল মাঠে নয়, সমাজে একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

🔥 সালাহ: আজকের তারকা, কালকের কিংবদন্তি
লিভারপুলের “মেসি” হিসেবে পরিচিত এই মিশরীয় স্ট্রাইকার তার কর্মজীবনে যে অবদান রেখেছেন, তা নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তার খেলা, তার নিষ্ঠা, এবং তার মানবিক কাজ তাকে ফুটবল ইতিহাসে এক অনন্য স্থান প্রদান করেছে। সালাহ যখন মাঠে থাকেন, তখন প্রতিপক্ষের জন্য শুধু ভয়ই নয়, তার অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে কিংবদন্তির শিরোপায় বসিয়েছে।

এটি শুধু এক ফুটবলার নয়, একজন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্বের গল্প, যিনি মাঠে খেলেন এবং বাইরে থেকে সমাজকে উন্নত করার জন্য অবদান রাখেন। সালাহর নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

Scroll to Top