বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা আর বাজারে স্বর্ণের ঘাটতি মিলে স্বর্ণের বাজারে চলছে উত্তেজনার ঝড়। ঠিক এই সময়েই মার্কিন বিনিয়োগ জায়ান্ট সিটিগ্রুপ এক নাটকীয় পূর্বাভাস দিয়েছে—আগামী তিন মাসের মধ্যেই স্বর্ণের দাম পৌঁছাতে পারে আউন্সপ্রতি ৩,৫০০ ডলারে!
বিশ্ববাজারে এমন রেকর্ডমূল্যের সম্ভাবনার পেছনে রয়েছে একাধিক বড় কারণ। চীনের বীমা কোম্পানিগুলো এখন স্বর্ণে বড় অংকের বিনিয়োগে ঝুঁকছে—দেশটির সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০টি কোম্পানি তাদের মোট সম্পদের ১ শতাংশ পর্যন্ত স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে পারবে। এর ফলে বছরে অতিরিক্ত ২৫৫ টন স্বর্ণের চাহিদা তৈরি হবে, যা একাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত স্বর্ণক্রয়ের এক-চতুর্থাংশের সমান!
শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতির পরিপ্রেক্ষিতে চীন আবারও স্বর্ণ আমদানির কোটা চালু করেছে এবং আমদানির সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে। ফলে পরবর্তী মাসগুলোতে চীনে স্বর্ণ আমদানি আরও বাড়বে বলে অনুমান করছে বিশ্লেষকরা।
সিটি রিসার্চ জানাচ্ছে, বিশ্ববাজারে বর্তমানে ফিজিক্যাল গোল্ডের (বার, গহনা, কয়েন ইত্যাদি) সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণে দাম আরও বাড়াতে হবে যাতে ব্যবসায়ীরা তাদের মজুদ থেকে স্বর্ণ বিক্রি করতে আগ্রহী হয়।
এর আগে সিটিগ্রুপ স্বর্ণের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দাম ৩,২০০ ডলার বললেও, এখন তারা তা বাড়িয়ে ৩,২৫০ ডলার গড় মূল্য এবং সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ডলার বলছে—বিশেষ করে দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) জন্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পর এটাই হতে যাচ্ছে স্বর্ণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সময়! কারণ শুধু বিনিয়োগ নয়, শিল্প খাতেও চাহিদা পৌঁছতে পারে উৎপাদনের ১১০ শতাংশে—এমন কিছু আগে দেখা যায়নি।
এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) মার্কেটেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। এর পেছনে রয়েছে সুদের হার ও ডলারের দাম কমে যাওয়ার প্রত্যাশা।
আর এক চমকপ্রদ তথ্য—বর্তমানে স্বর্ণ উত্তোলন ব্যয় আর বাজার মূল্যের মধ্যে ব্যবধান প্রতি আউন্সে প্রায় ২ হাজার ডলার, যার ফলে স্বর্ণ উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলোর মুনাফা এখন আকাশ ছোঁয়!
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন ইতিহাস গড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।