North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

৪০ টাকার বিরিয়ানি আর মানবতার কবি শামীম হোসেন

রাজশাহীর ব্যস্ত এলাকা বাটার মোড়। চারপাশে হঠাৎ ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। সন্ধ্যা নামতে এখনো কিছু সময় বাকি। একেকজন মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন হাতে ৪০ টাকা করে ধরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানি। না, এটা কোনো বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ নয়। এখানে দাঁড়ানো মানুষগুলোও বড়লোক নন। কিন্তু তারা জানেন, এই সামান্য ৪০ টাকায় তাদের ইফতারে মিলবে এক প্লেট বিরিয়ানি। আর এর পেছনে যিনি আছেন, তিনি কবি শামীম হোসেন।

এক অন্যরকম কবি, যিনি কবিতা লেখেন শুধু কাগজে-কলমে নয়, মানুষের হৃদয়ে মানবতার চর্চা দিয়ে। তিনি শুধু কবিতার পঙ্‌ক্তি সাজিয়েই থেমে যাননি। মানুষের দুঃখ-বেদনা, সংগ্রামের কথা যিনি কবিতায় তুলে ধরেন, তিনিই যেন নিজের জীবনে মানবতার আরেকটি অধ্যায় লিখতে নেমে এসেছেন।

রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের আগে মাত্র ৪০ টাকায় তিনি বিক্রি করেন বিরিয়ানি। শুধু ব্যবসা নয়, তার এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে এক মহৎ উদ্দেশ্য—পথে ঘুরে বেড়ানো নিম্নবিত্ত, দরিদ্র মানুষ যেন অন্তত ইফতারের সময় ভালো খাবার খেতে পারেন।

শামীম বলেন, “আমি দেখেছি, রোজার মাসে অনেক মানুষ ভালো খাবারের জন্য হা-পিত্যেশ করে থাকেন। কিন্তু দামের কারণে ইফতারির টেবিলে তারা সে খাবার রাখতে পারেন না। রোজার সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা লাভ করে। আর কষ্ট হয় নিম্নবিত্তদের। আমি চাই, রোজার সময় তাদের জন্য অন্তত একবেলা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে।”

তিনি আরও বলেন, “হোটেল-রেস্তোরায় খাবারের দাম প্রচুর। এত দাম দিয়ে অনেকের ইফতার কেনার সামর্থ্য নাই। বিশেষ করে রাজশাহীতে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীদের পক্ষে এত টাকা দিয়ে প্রতিদিন ইফতার কেনা প্রায় অসম্ভব। এই দিক বিবেচনায় নিয়ে আমি আমার সাধ্য মত এইটুকু করেছি।”

প্রতিদিন শামীম নিজের হাতে বিরিয়ানি রান্না করেন। চাল, মাংস, তেল—সবকিছু কেনা হয় স্থানীয় বাজার থেকে। যত্ন নিয়ে রান্না করার পর বিরিয়ানি বিক্রির জন্য তিনি বসেন রাস্তার পাশে। দরিদ্র মানুষ ছাড়াও যারা সামর্থ্যবান, তারাও আসেন। কিন্তু শামীম কখনো কারও কাছে দাম বেশি রাখেন না। ৪০ টাকাই তার একমাত্র শর্ত।

শামীমের বিরিয়ানি নিয়ে মানুষের মধ্যে চলছে বেশ আলোচনা। কেউ কেউ তার উদ্যোগকে ‘মানবতার খাবার’ বলে অভিহিত করছেন। এক তরুণ শিক্ষার্থী বলেন, “এত অল্প টাকায় বিরিয়ানি পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ৪০ টাকায় কোথাও বিরিয়ানি পাওয়া যাবে না। দাম কম হলেও উনার বিরিয়ানির মান অত্যন্ত ভালো। আমি প্রতিদিনই আসি।”

রাজশাহীর এই তরুণ কবির উদ্যোগ শুধু খাবার বিলানোর গল্প নয়। এটি মানুষকে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার গল্প। এটি শেখায়, ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ দিয়েও সমাজে বড় পরিবর্তন আনা যায়। শামীমের এই কাজ হয়তো কিছু মানুষের ক্ষুধা মেটায়, কিন্তু তার ছড়ানো ভালোবাসা অনেক মানুষের হৃদয়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে যায়।

কবি শামীম হোসেনের এই বিরিয়ানি বিক্রির গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানবতা এখনো বেঁচে আছে। তিনি নিজের ছোট উদ্যোগ দিয়ে প্রমাণ করেছেন, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, আর পরোপকারের মধ্যে এক অভাবনীয় শক্তি আছে। হয়তো শামীমের এই উদ্যোগ দেখে আরও কেউ একদিন এমন ভালো কাজ শুরু করবেন। আর সেই দিনই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।

(আমরা চাই, সমাজের এমন গর্বিত মানুষদের গল্প ছড়িয়ে যাক। তাদের মানবিক উদ্যোগগুলো আমাদের সকলকে ভালো মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা দিক।)

Scroll to Top