পাবনায় আখক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে শুরু হয়েছে ধান চাষের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ, যা পাল্টে দিতে পারে দেশের কৃষি অর্থনীতির গতিপথ। বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) উদ্ভাবিত এই যুগান্তকারী পদ্ধতিতে একই জমিতে কম পানিতে আখ ও ধান দুটোই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
বিএসআরআই-এর গবেষকদের দাবি, আখের চাষ থেকে পাওয়া আয় দিয়েই ধান চাষের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় মেটানো সম্ভব। এতে করে কৃষকের সার্বিক খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি ধানের উৎপাদন বাড়বে এবং চিনিকলগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংকটও অনেকটাই দূর হবে।
💡 কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি?
আখ খরার সহনশীল ফসল হওয়ায় এর পাশে ধান চাষ করলে পানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। বিএসআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামস তাবরিজ জানান, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে যেখানে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি লাগে, সেখানে এই পদ্ধতিতে তার এক চতুর্থাংশেই কাজ চলে যায়। একই সার দুই ফসলের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় খরচ বাঁচে আরও বেশি।
📊 সম্ভাবনার চিত্র
গবেষণা বলছে, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকল এলাকার এক লাখ হেক্টর জমিতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বছরে অতিরিক্ত ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া বেড পদ্ধতি ও সরাসরি আবাদ—দুইভাবেই এই যৌথ চাষ সফলভাবে করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, এই পদ্ধতি কৃষকের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিচ্ছে। আখ এককভাবে চাষ করলে যেখানে সময় ও খরচ অনেক বেশি, সেখানে ধানকে সাথি ফসল হিসেবে নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ সম্ভব হচ্ছে।
🌾 কৃষকের মুখে হাসি ফেরাতে প্রস্তুত নতুন প্রযুক্তি
ঈশ্বরদীর মুলাডুলি কৃষি ফার্মসহ কয়েকটি এলাকায় গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষামূলক ফলন সফল হওয়ায় এখন চলছে চূড়ান্ত বিশ্লেষণ ও সীমাবদ্ধতা দূর করার কাজ। খুব শিগগিরই কৃষক পর্যায়ে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএসআরআই।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আখ-ধানের যৌথ চাষ নিঃসন্দেহে একটি বড় সম্ভাবনার দিক। তবে সময়মতো রোপণ ও সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করাই হবে মূল চাবিকাঠি।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “ধান আমাদের প্রধান ফসল। আখক্ষেতে ধানের আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে—এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”