North News.live

উত্তরবঙ্গের কণ্ঠস্বর

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: মুক্তিযুদ্ধে এক অকুতোভয় সেনানায়ক

ছবি: সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক,নর্থ নিউজ ডট লাইভ।

২৫ মার্চের প্রতিরোধ: “We Revolt”

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর হামলা চালায়, তখন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহকারী কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সেই রাতে কর্নেল জানজুয়ার নির্দেশে অস্ত্র খালাস তদারকি করতে গিয়ে আগ্রাবাদে পাকিস্তানি সেনাদের বাঙালি সৈনিকদের ওপর হামলার খবর পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি “We Revolt” বলে তার সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি অফিসারদের নিরস্ত্র করেন এবং ক্যান্টনমেন্টে ফিরে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে কর্নেল জানজুয়াকে আটক ও হত্যা করে পুরো সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণ নেন। এরপর ২৭ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন:

“I, Major Zia, Provisional Commander-in-Chief of the Bangladesh Liberation Army, hereby proclaim, on behalf of Sheikh Mujibur Rahman, the independence of Bangladesh.”

জেড ফোর্সের গঠন ও নেতৃত্ব

মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’। ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই ১ম, ৩য় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত এই ব্রিগেডটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী। জেড ফোর্সের অধীনে রৌমারী মুক্তাঞ্চলে প্রায় ১৮,০০০ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

সম্মুখযুদ্ধে সাহসিকতা

মেজর জিয়া নিজে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। কামালপুরের প্রথম যুদ্ধ, বিলোনিয়ার যুদ্ধ, নকশী বিওপির যুদ্ধ, বাহাদুরাবাদ যুদ্ধ, দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ, চিলমারী উভচর অভিযান, হাজীপাড়া, ছোটখাল, গোয়াইনঘাট, টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলাই চা-বাগান, জকিগঞ্জ, আলি-ময়দান, এমসি কলেজের যুদ্ধ, ভানুগাছ যুদ্ধ, কানাইঘাট যুদ্ধ, বয়মপুর যুদ্ধ, ফুলতলা চা-বাগান যুদ্ধসহ অসংখ্য যুদ্ধে তার প্রত্যক্ষ নির্দেশ ও রণকৌশলে মুক্তিবাহিনী সফলতা অর্জন করে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কামালপুরের যুদ্ধ, যেখানে ৩১ জুলাই ১৯৭১ সালে মেজর জিয়া ক্যাপ্টেন হাফিজ ও ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দীনের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দীন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামসুজ্জামান শহীদ হন। এই যুদ্ধের জন্য জেড ফোর্সের ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম থেকে বীর প্রতীক পদক লাভ করেন, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য।

🏅 বীরত্বের স্বীকৃতি

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও নেতৃত্বের জন্য মেজর জিয়াউর রহমানকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং পরবর্তীতে ১১ নম্বর সেক্টর ও জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। তার নেতৃত্ব, সাহসিকতা ও কৌশলী রণনীতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি শুধু একজন সেনানায়কই নন, বরং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় এক অগ্রগামী যোদ্ধা।

Scroll to Top